US ডলার, ঐতিহাসিকভাবেবিশ্বব্যাপী অর্থনীতির সবথেকে প্রভাবশালী মুদ্রা, ইতিহাসে দুই দশক সময় ধরে বিস্তৃত রয়েছে।অ্যাকাউন্টের একটি সহজ ইউনিট থেকে এটি বৈশ্বিক রিসার্ভ অ্যাসেটে রূপান্তরিত হয়েছে, শুধুমাত্র নিজের দেশেই নয় বরং সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলিকে প্রতিফলিত করে।ডলারের অতীত এবং ভবিষ্যত ট্রেডারকে বর্তমান বাজারের ট্রেন্ডগুলির বিশ্লেষণ করতে, তাদের উন্নতির পূর্বাভাস করতে, "গ্রীনব্যাক"-এর শক্তির মূল্যায়ন করতে, এবং অবগত ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।সুতরাং, ডলার কোথা থেকে এসেছে এবং আজকের দিনের অবস্থায় কীভাবে পৌঁছেছে?
18শো শতাব্দী: US-এর স্বাধীনতার শুরুতে ডলার
18শো শতাব্দিতে US ডলারের ইতিহাস তরুণ আমেরিকা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। বিভিন্ন মূল পর্যায় এবং ঘটনাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, এই সবকিছু দেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল।
"ডলার" শব্দটির উৎপত্তি নিঊ ইয়র্কের অস্তিত্বের শুরু বছরগুলি থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। 17শো শতাব্দীতে, নিউ ইয়র্ক ডাচ বসতি ছিল যার নাম ছিল নিউ আমস্টারডাম, এবং সেখানে প্রধান মুদ্রা ছিল "লিওয়ানডেলার" (সিংহ সমন্বিত ডাচ কয়েন)। শুধুমাত্র ডাচ মুদ্রার জন্যই নয় বরং আরও অন্যান্য মুদ্রা জন্যও, ছোট নাম হিসাবে "ডেলার" শব্দটি বিস্তৃতরূপে ব্যবহৃত হতে থাকে।
এটা মনে রাখতে হবে যে আমেরিকার একীভূত মুদ্রা গঠনের পূর্বে, আমেরিকার বিভিন্ন কলোনিগুলি বিভিন্ন ধরণের অর্থ ব্যবহার করতো, যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ পাউন্ড, স্প্যানিশ ডবলুনস, এবং পণ্যগত অর্থ যেমন তামাক এবং ভুট্টা। নিজে সরকারের মতোই, স্বাধীনতার যুদ্ধের (1775-1783) সময় প্রথম সত্যিকারের আমেরিকার মূদ্রার আবির্ভাব ঘটে, যখন কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস 1776 সালে এটির প্রচলনের প্রথম সরকারী আইন চালু করে।
সেই সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা ছিল কয়েনের অভাব। ফলস্বরূপ, দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস কন্টিনেন্টাল ডলার ইস্যু করে – সামরিক খরচের অর্থয়নের জন্য কাগজের মুদ্রা। এই নোটগুলি সোনা বা রূপা দ্বারা সমর্থিত ছিল না, যা তাদের অবমূল্যায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতির দিকে পরিচালিত করে। "কন্টিনেন্টাল ডলারের মুল্য নেই" এই বাক্যটি এই ধরণের অর্থে জনসাধারণের আস্থার ব্যাপক ক্ষতির জন্য এই সময়ে অবির্ভূত হয়েছিল।
ডলারের ইতিহাসে প্রধান মুহূর্ত ছিল 1792 সালের কয়েনেজ আইনের গ্রহণ, যা আনুষ্ঠানিকভাবে US মুদ্রা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই আইন ডলারকে মুদ্রা ব্যবস্থার ইউনিট রূপে মনোনীত করে এবং আমেরিকার প্রথম টাকশাল গঠনের জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল। ডলারকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল যে এটির মধ্যে 371.25 গ্রেন (24.057 গ্রাম)-এর খাঁটি রূপা রয়েছে, যা জনপ্রিয় স্প্যানিশ সিলভার পেশো ("স্প্যানিশ ডলার" নামেও পরিচিত) থেকে অনুপ্রাণিত।
আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন (1755/1757–1804), প্রথম US-এর টেজারির সেক্রেটারি, একটি জাতীয় ব্যাঙ্ক গঠন করার পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এটির লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি, মুদ্রার স্থিতিশীলতা, এবং রাজ্যের ঋণের ফেডেরাল ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা। হ্যামিল্টনের চিন্তাধারা এবং সংস্কারগুলি ডলারকে জাতীয় মুদ্রা রূপে স্থাপন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নতুন অর্থের প্রতি বিশ্বাসে অবদান রেখেছিল।
18শো শতাব্দীর শেষে দিক পর্যন্ত, ডলার দেশীয় লেনদেনগুলির ক্ষেত্রে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছিল এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ক্রমশ স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছিল। একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল সারা US জুড়ে বিভিন্ন টাকশাল স্থাপন, যা একটি একীভূত মানে কয়েন তৈরি করা নিশ্চিত করতো। এটি আমেরিকার অর্থনৈতিক পদ্ধতির ভিত্তি রূপে ডলারের ভূমিকাকে শক্তিশালী করেছিল, এই তরুণ দেশের বহু অর্থনৈতিক এবং আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে, ভবিষ্যত্যের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করতে, এবং ভবিষ্যতে বিশ্বাব্যাপী শীর্ষস্থানীয় মুদ্রা হয়ে ওঠার ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল।
19শো শতাব্দী: স্বীকৃতির কঠিন পথ
19শো শতাব্দীর শুরুর দিকে, ইউরোপীয় মুদ্রা যেমন ব্রিটিশ পাউন্ড স্টারলিং-এর আন্তর্জাতিক ট্রেড এবং আর্থিক রিসার্ভে সবথেকে স্থিতিশীল মুদ্রা রূপে, বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় আধিপত্য ছিল। বৈশ্বিক বাজারে ডলারের ভূমিকা খুব কমই লক্ষনীয় ছিল। এটি এই দশকের মাঝামাঝির দিকে শক্তি এবং সম্মান পেতে শুরু করেছিল যখন US-এর শিল্প উন্নয়ন এবং আমেরিকার অর্থনীতির সম্পসারণ এটির স্বীকৃতির পথ তৈরি করেছিল।
1792 সালে কয়েনেজ আইন জারি করা থেকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ (1861-1865)-র শুরু পর্যন্ত, ফেডেরাল সরকার ব্যাঙ্কনোটগুলি ইস্যু করেনি। কাগজের মুদ্রা পৃথক রাজ্য এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থা নতুন স্বাধীন রাজ্যের উত্থানের সাথে সাথে আরও জটিল হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন আকার এবং ডিজাইনের ব্যাঙ্কনোটের অফুরন্ত বৈচিত্র্যের কারণের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির হয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলিকে মুদ্রার স্যাম্পেলের সাথে ক্যাটালগ তৈরি করতে হয়েছিল এবং, নিরাপত্তার জন্য, বিদেশী ব্যাঙ্কনোটগুলিকে ছাড় প্রদান করে বিনিময় করতে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, টেনেসি-র কৃষি ব্যাঙ্কের $5-এর বিলের মূল্য নিউ ইয়র্ক-এ ছিল শুধুমাত্র $4।
কিন্তু এই বিভ্রান্তি এখানেই শেষ হয়নি; এটি শুধুমাত্র আরও জোরালো হয়েছিল যখন জালিয়াতরা এবং প্রতারকরা মুদ্রা প্রিন্ট করতে শুরু করেছিল। যেহেতু যেকোনো রাজ্যের যেকোনো ব্যাঙ্ক নিজস্ব অর্থ প্রিন্ট করতে পারতো, কেউ কেউ প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষ করে বন্য পশ্চিমে তথাকথিত "ওয়াইল্ডক্যাট ব্যাঙ্ক" খোলা শুরু করেছিল, যেখানে তারা তাদের নিজস্ব মুদ্রার সূচনা শুরু করেছিল। যদি এই ধরণের ব্যাঙ্ক তার মালিকের সাথে দেউলিয়া অথবা অদৃশ্য হয়ে যেতো, তাহলে এটির ডলার মূল্যহীন ডলারে পরিণত হতো।
গৃহযুদ্ধের পরে এই অবস্থায় ক্রমশ উন্নতি হওয়া শুরু হয়, যা দেশের অর্থনীতি এবং আর্থিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। যুদ্ধের সময়, সরকার "গ্রীনব্যাক" নামক কাগজের মুদ্রা ইস্যু করেছিল –1, 2, 5, 10, 20, 50, 100, 500, 1000, এবং 10000 ডলারের ট্রেজারি নোটগুলি নিয়ে আসা হয়েছিল যা মূল্যবান ধাতুর সাথে বিনিময় করা যেতো না। এই ব্যাঙ্কনোটগুলির পিছনের দিকটি সবুজ রঙের হওয়ার জন্য এটি তার নাম "গ্রীনব্যাক" পেয়েছিল। সোনা এবং রূপার উপর কাগজের মুদ্রা ইস্যু করার নির্ভরতা সাময়িকভাবে কমে গিয়েছিল এবং অর্থনীতিতে ফেডেরাল সরকারের ভূমিকাকে শক্তিশালী করেছিল। যাইহোক, অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় এইগুলির ব্যাপকভাবে প্রিন্ট করার ঘটনা গ্রীনব্যাককে উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়নের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। 1864 সালে, রূপোতে কাগজের ডলারের মূল্য ছিল 40 সেন্ট-এরও কম।
গৃহযুদ্ধের পরে, 1875 সালের স্পিসি পেমেন্ট রিসাম্পশন আইনে জন্য সরকারকে কাগজের অর্থ রিডিম এবং সোনার সাথে বিনিময় করার প্রয়োজন হয়, যা একটি বিশ্বস্ত এবং স্থিতিশীল মুদ্রারূপে ডলারের আস্থাকে শক্তিশালী করে।
19শো শতাব্দীর শেষের দিক: বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের সূচনা
US-এর শিল্প বিপ্লব, যা 19শো শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধে শুরু হয়েছিল, সেটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছিল। রেলওয়ে পরিবহণের উন্নয়ন, স্টীল ইন্ডাস্ট্রি, এবং ব্যাপক উৎপাদন জাতীয় সম্পদের বৃদ্ধিতে এবং দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের বর্ধিত প্রচলনে অবদান রাখে। US-তে একটি বিশাল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা জাতীয় মুদ্রার স্থিতিশীল প্রচলন, ঋণ প্রদান, এবং বড় বড় শিল্প প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করতো।
এই সময়েই, US সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সম্মেলন-এ অংশগ্রহণ করা শুরু করে, যেমন 1878 সালের ইন্টারন্যাশানাল মনেটারি কনফারেন্স, যেখানে মুদ্রা প্রমিতকরণ জারি করা এবং ট্রেড সম্মন্ধে আলোচনা করা হয়েছিল। সেই বছরের এই আইন জারি করা হয় যা গ্রীনব্যাক-এর ইস্যুকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের আস্থা এবং স্বীকৃতি অর্জন করতে সাহায্য করে। আমেরিকার মুদ্রা আরও সক্রিয়ভাবে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টগুলিতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে US থেকে পণ্যের রপ্তানি, যেমন তুলা, তামাক এবং গম, সেইসাথে বিদেশে আমেরিকার বিনিয়োগ, ঋণ, এবং আর্থিক সহায়তা। US-এর বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষভাবে ল্যাটিন আমেরিকায় ডলারের প্রভাব বিস্তার করার জন্য, এটিকে আর্থিক ডিপ্লোমেসির টুলরূপে ব্যাবহার করতে শুরু করেছিল।
এই সকল ব্যবস্থা ডলারকে শক্তিশালী করেছিল, এটিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আরও বেশী অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সুবিধাজনক করে তুলেছিল। 20শো শতাব্দী আসতে আসতে, এক দশক পূর্বের তরুণ এবং অস্থায়ী মুদ্রা থেকে বিশ্ব অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য উপাদানে পরিবর্তিত হয়েছিল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছিল, এবং এটির স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সারা বিশ্বে আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থার আস্থা শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছিল। এই সবকিছুই ভবিষ্যতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে ডলারের আধিপত্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা 20শো শতাব্দীতে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়েছিল।
20শো শতাব্দীর প্রথম অর্ধ: বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের যুদ্ধ এবং সংকটের মাধ্যমে
20শো শতাব্দীর প্রথম অর্ধে, US ডলার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতি হয়ে ওঠে। এই সময়কাল বিভিন্ন বিশ্বব্যাপী ঘটনা দ্বারা চিহ্নিত ছিল, যার মধ্যে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, গ্রেট ডিপ্রেশন, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (1914-1918) সময়, US মিত্রশক্তির (রাশিয়ার সাম্রাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন, এবং ফ্রান্স) বৃহত্তম ঋণদাতা এবং সম্পদের সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। 1917 সালের যুদ্ধে প্রবেশের পূর্বে, US সক্রিয়ভাবে মিত্রদের সাথে ব্যাবসা করেছিল এবং ঋণ প্রদান করেছিল, যা সোনায় উল্লেখযোগ্য অন্তঃপ্রবাহ ঘটায় এবং ডলারকে শক্তিশালী করেছিল। ইউরোপ দুর্বল হয়ে পড়ায় এবং US-এর অর্থনিতি শক্তিশালি হওয়ায় এই যুদ্ধ ডলারকে বিশ্বের মুদ্রা রূপে উত্থিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করেছিল।
যুদ্ধের (1918-1929) পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের আরও প্রচারের জন্য এটির অর্থনৈতিক আধিপত্যকে ব্যবহার করেছিল। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির স্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক কনফারেন্সগুলিতে অংশগ্রহণ বিশ্বের অর্থনীতিতে এটির একত্রীকরণ সহজতর করেছিল। যাইহোক, 1929 সালে স্টক বাজারের ক্র্যাশ এবং তার পরেই গ্রেট ডিপ্রেশন (1929-1939) US-এর অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। অর্থনৈতিক নিম্নমূখিতার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলীন রুসভেল্ট "নিউ ডিল" নামক একাধিক পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে 1933 সালে সোনার মান পরিত্যাগ করা, যা অর্থের সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিল। এই পদক্ষেপগুলি ডলারকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছিল এবং এটি পরবর্তী শক্তিশালীকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (1939-1945) সময়, US আরও একবার প্রধান অর্থনৈতিক ইঞ্জিন হয়ে ওঠে, যেখানে অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশগুলি বিধ্বস্ত ছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর আগে, 1 থেকে 22 জুলাই, 1944, ব্রেটন উডস কনফারেন্স, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনাইটেড নেশনস মনেটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল কনফারেন্স নামে পরিচিত, সেটি সংঘটিত হয়েছিল।এই ঘটনা যুদ্ধের পরের বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এই কনফারেন্স ব্রেটন উডস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, USA-এর মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে 44টি মিত্র দেশের 730 জন প্রতিনিধিদের একত্রিত করেছিল। এটির প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ গঠন করা যা 1930 সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্রতিরোধ করতে পারে। এই কনফারেন্সের প্রাথমিক লক্ষ্য এবং অর্জনগুলি ছিল:
- বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা: প্রতিযোগীতামূলক অবমূল্যায়ন এবং ট্যারিফ যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে যা গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে এসেছিল, তার জন্য একটি নির্দিষ্ট কিন্তু পরিবর্তনশীল বিনিময় হার গঠন করা। ডলার বিশ্বের প্রধান রিসার্ভ মুদ্রা হয়ে উঠেছিল, এবং সকল প্রধান মুদ্রাগুলি গ্রীনব্যাক-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা প্রতি আউন্সে $35-এর নির্ধারিত হারে সোনার সাথে বিনিময়যোগ্য ছিল।
- ইন্টারন্যাশানাল মনেটারি ফান্ড (IMF)-এর গঠন: মুদ্রা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের জন্য, বিভিন্ন দেশগুলির বিনিময় হার বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের স্বল্প-মেয়াদী ঋণ প্রদান করার জন্য, এবং পেমেন্টের ব্যালেন্স সম্মন্ধীয় সমস্যার সমাধানের জন্য IMF গঠন করা হয়েছিল।
- ইন্টারন্যাশানাল ব্যাঙ্ক ফর রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IBRD অথবা বিশ্ব ব্যাঙ্ক)-এর গঠন: যুদ্ধের পরে দেশগুলির পুনর্গঠন এবং উন্নয়নয়ের জন্য দীর্ঘ-মেয়াদী মূলধন প্রদান করতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের স্থাপনা করা হয়েছিল। প্রধান লক্ষ্য ছিল সেইসকল প্রজেক্টগুলিতে অর্থায়ণ যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার উন্নত মানকে প্রচার করেছিল।
এই কনফারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলির মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক ট্রেড এবং বিনিয়োগের প্রচার, যা 1930 সালের বিশৃঙ্খল এবং অস্থিতিশীল অবস্থার পরে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল মুদ্রার পরিবেশ প্রদান করা। আরও একটি ফলাফল ছিল US ডলারের শক্তিশালী হওয়া। ডলার, সোনার সাথে সাথে, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করেছিল।
20শো শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধ: "নিক্সন শক" এবং এটির পরিণতি
যদিও ব্রেটন উডস যুদ্ধ পরবর্তী প্রথম দশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছিল, এটি 1960 সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য ছিন্ন ভিন্ন হতে শুরু করে। অবশেষে, 1971 সালে, US-এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের সোনায় রূপান্তর করা স্থগিত করার ঘোষনা করেন। এই ঘটনা "নিক্সন শক" নামে পরিচিত, এবং এটির পরিণতির মধ্যে রয়েছে:
- ভাসমান বিনিময় হারে রূপান্তর: ডলারের সোনায় রূপান্তরের স্থগিত হওয়ার তৎক্ষণাৎ পরেই, বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলি ভাসমান বিনিময় হারের ব্যবস্থায় রূপান্তর হয়েছিল। এটি বিনিময়ের হারকে ডলার বা সোনার সরাসরি অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই বাজারের অবস্থার উপর ওঠানামা করতে সক্ষম করে।
- মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা বৃদ্ধি: ভাসমান বিনিময় হারের ব্যবস্থা মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা নিয়ে এসেছিল, যেখানে বিনিময়ের হারগুলি এখন বিস্তৃত সীমার অর্থনৈতিক সূচকগুলির এবং অনুমানমূলক বাজারের অনুভূতির উপর নির্ভর করে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির বর্ধিত ভূমিকা: একটি আরও জটিল এবং গতিশীল বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিবেশে জাতীয় মুদ্রার ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি অনেক বেশী শক্তি এবং দায়িত্ব অর্জন করেছিল।
ব্রেটন উডস সিস্টেমের পতন সত্ত্বেও, এটি আধুনিক আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিকাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং IMF ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের গঠনে অবদান রেখেছিল, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে তার প্রধান ভূমিকা চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে, ব্রেটন উডস সিস্টেমের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির সমন্বয় এবং স্বতন্ত্র দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির বৈশ্বিক আর্থিক পরিকাঠামোর প্রভাবের গুরুত্ব তুলে ধরে। এমনকি "নিক্সন শক"-এর পরে, গ্রীনব্যাক তার অবস্থান ধরে রেখেছিল, এবং 20শো শতাব্দীর শেষ এবং 21শো শতাব্দীর শুরুর দিকে, এটি প্রধান রিসার্ভ মুদ্রা এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড এবং অর্থায়নের প্রধান টুল রূপেই রয়ে গেছে।
21শো শতাব্দী: নতুন সংকট, নতুন চ্যালেঞ্জ
21শো শতাব্দীতে, যদিও ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করা চালিয়ে যাচ্ছে, তবুও এটি ক্রমশ আরও নতুন সমস্যা এবং পরিবর্তনগুলির সম্মুখীন হচ্ছে যা আরও জটিলি এবং বিশ্বায়িত আর্থিক বিশ্বকে প্রতিফলিত করে। 2000 সালে অর্থনৈতিক বুম 2008 সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, যা গভীর মন্দায় নিয়ে গিয়েছিল এবং বৃহৎ-মাত্রায় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়েছিল। US ফেডেরাল রিসার্ভ (ফেড) –কে সুদের হার কম করতে হয়েছিল এবং অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য কোয়ান্টিটেটিভ ইসিং (QE) প্রোগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল।
2020 সালে, কোভিড-19 অতিমারি আর একটি অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হয়েছিল। সেখানে US আরও একবার আক্রমনাত্মক রাজস্ব এবং আর্থিক নীতির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে স্টিমুলাস ফান্ডিং এবং আরও কোয়ান্টিটেটিভ ইসিং। এই পদক্ষেপগুলি অর্থনীতিকে সমর্থন করতে সাহায্য করেছিল কিন্তু একই সময়ে সরকারের ঋণ বৃদ্ধি করেছিল এবং সেটি মুদ্রাস্ফীতির দিকে অগ্রসর করেছিল। অতিমারি কমে যাওয়ার পরে US-এর অর্থনীতি সবথেকে প্রতিকূলতার অবস্থা সত্ত্বেও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছিল, US-র কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ধীরে ধীরে এটির আর্থিক নীতি স্বাভাবিক করা শুরু করে।
আজকের দিন পর্যন্ত, ডলার অ্যাসেটকে সংরক্ষণের সবথেকে বিশ্বস্ত মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাই অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা রিসার্ভগুলি US ডলারে রাখা থাকে, যা গ্রীনব্যাকের জন্য উচ্চ চাহিদা নিশ্চিত করে। তেলের মূল্য এবং অন্যান্য প্রধান পণ্যগুলি প্রথাগতভাবেই ডলারে মূল্যায়িত হয়, এবং অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ট্রেড এবং ফাইন্যান্সিয়াল লেনদেনগুলি এখনও এই মুদ্রাতেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
যাইহোক, এটি বলা যায় না যে ডলার তার খ্যাতির উপর নির্ভর করতে পারে। সম্প্রতি বছরগুলিতে, অন্যান্য মুদ্রাগুলি যেমন ইউরো এবং চাইনিজ ইউয়ান থেকে প্রতিযোগীতা, আরও তীব্র হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলির সাথে সোয়াপ চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টে ইউয়ানের ব্যবহার বর্ধিত করে, চিন সক্রিয়ভাবে ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা রূপে প্রচার করছে।ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (CBDC) –র স্বার্থ ডলারের আধিপত্যে আরও একটি প্রতিকূলতার সৃষ্টি করেছে। US সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণ আমেরিকার মুদ্রার দীর্ঘ-কালীন স্থিতিশীলতার সম্মন্ধে উদ্বেগের উত্থাপন করেছে এবং এটির আস্থার পতনের দিকেও অগ্রসর করতে পারে। সেইজন্যই, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি এবং প্রতিকূলতাগুলির সম্মুখে, ভবিষ্যতে এটির প্রভাবশালী অবস্থান বজায় রাখার জন্য ডলারের স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ফিরে যান ফিরে যান